Economics - Economics & State

চীন কি সামরিক সংঘাতে জড়াতে পারে?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন বেইজিংয়ের সেই আশাবাদে তেমন একটা চিড় ধরাতে পারেনি যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আসা অব্যাহত হুমকি এবং বিশ্ব আধিপত্যের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। এবং ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর দিকের পদক্ষেপগুলো বেইজিংয়ের এই বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছে যে যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব পতনকে ত্বরান্বিত করছে, যা সমতার একটি নতুন যুগকে আরও কাছে নিয়ে আসছে। চীনের সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কোনো অস্তিত্বগত হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা নেই – এই ধারণা বেইজিংয়ের নীতিতে একটি স্থিতিশীল প্রভাব ফেলেছে।

লেখক Gazi Zahid Hassan
সময় ০৮/০৫/২৫ ০৪:১০:৪১
Facebook LinkedIn X (Twitter) WhatsApp Share
সারাংশ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন বেইজিংয়ের সেই আশাবাদে তেমন একটা চিড় ধরাতে পারেনি যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আসা অব্যাহত হুমকি এবং বিশ্ব আধিপত্যের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। এবং ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর দিকের পদক্ষেপগুলো বেইজিংয়ের এই বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছে যে যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব পতনকে ত্বরান্বিত করছে, যা সমতার একটি নতুন যুগকে আরও কাছে নিয়ে আসছে। চীনের সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কোনো অস্তিত্বগত হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা নেই – এই ধারণা বেইজিংয়ের নীতিতে একটি স্থিতিশীল প্রভাব ফেলেছে।

২০২১ সালে, বাইডেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চীনা পররাষ্ট্রনীতির কর্মকর্তাদের সাথে উত্তপ্ত প্রথম বৈঠকে, বেইজিংয়ের শীর্ষ কূটনীতিক ইয়াং জিয়েচি ঘোষণা করেন যে যুক্তরাষ্ট্র আর "শক্তির অবস্থানে থেকে চীনের সাথে কথা বলতে পারবে না।" এই বিবৃতি দেখে মনে হয়েছিল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি ব্লিংকেন এবং মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানকে বিচলিত করেছে। চীনের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের অবশ্যয় শিক্ষণীয় অনেক ব্যাপার রয়ে গেছে। সেই সময় থেকে পরবর্তী চার বছরে, বেইজিং এই ধারণার অধীনে কাজ করেছে যে দুটি দেশের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যে একটি গভীর পরিবর্তন আসছে। চীনা ডিপ্লোম্যাটরা তাদের দেশের কয়েক দশকের "কৌশলগত দুর্বলতা", যা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশী প্রতীয়মান ছিল, তা শেষ হতে চলেছে বলে মনে করছেন, যা চীনের শিল্প, প্রযুক্তিগত এবং সামরিক সক্ষমতার স্থিতিশীল অগ্রগতি এবং আন্তর্জাতিক প্রভাব বৃদ্ধির দ্বারা চালিত। এই অগ্রগতির ফলে বেইজিং যা মনে করে, তা হলো যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি "কৌশলগত অচলাবস্থা" তারা তৈরি করেছে, যেখানে উভয় দেশই এখন তুলনামূলক ক্ষমতা ধারণ করে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কিছুদিন আগেও একক আধিপত্য ছিল।


যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন বেইজিংয়ের সেই আশাবাদে তেমন একটা চিড় ধরাতে পারেনি যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আসা অব্যাহত হুমকি এবং বিশ্ব আধিপত্যের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। এবং ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর দিকের পদক্ষেপগুলো বেইজিংয়ের এই বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছে যে যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব পতনকে ত্বরান্বিত করছে, যা সমতার একটি নতুন যুগকে আরও কাছে নিয়ে আসছে। চীনের সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কোনো অস্তিত্বগত হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা নেই – এই ধারণা বেইজিংয়ের নীতিতে একটি স্থিতিশীল প্রভাব ফেলেছে। এপ্রিল মাসে ট্রাম্পের বাণিজ্য উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় বেইজিং ধৈর্য ধারণ করেছে, এই প্রত্যাশায় যে ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমাবেন।


তবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে তাৎক্ষণিক সংঘাতের ঝুঁকি কম থাকা সত্ত্বেও, বর্তমানের এই অচলাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে। আগামী চার বছরে, দুটি দেশ যখন একে অপরের সংকল্পের পরীক্ষা নেবে, তখন সামরিক সংকটের ঝুঁকি সম্ভবত বাড়বে। ট্রাম্পের বর্তমান মেয়াদের শেষের দিকে, চীন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশ, তাইওয়ানের প্রতি তার অঙ্গীকার, দ্বীপটির সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের ওপর বিশ্ব অর্থনীতির নির্ভরতা এবং চীনের নিজস্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামরিক আধুনিকীকরণের গতিপথ পুনরায় মূল্যায়ন করার যথেষ্ট সুযোগ পাবে। যদি বেইজিং ওয়াশিংটনের সঙ্গে ক্ষমতার ব্যবধান আরও কমিয়ে আনে এবং তাইওয়ানের মর্যাদা নিয়ে আন্তর্জাতিক উদাসীনতা দেখাই এবং তাইওয়ানকে চীনের সঙ্গে একত্রিত করার অসামরিক প্রচেষ্টায় হতাশ হয় এবং ওয়াশিংটন ও তাইপেতে আরও তাইওয়ানপন্থী নেতৃত্ব দেখতে পায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সামরিক সংকটের ঝুঁকি দ্রুত বাড়তে পারে। আজকে যা কৌশলগত অচলাবস্থা বলে মনে হচ্ছে, তা দ্রুত উভয় দেশের জন্য আরও অস্থির – এবং বিপজ্জনক – কিছুতে পরিণত হতে পারে।


ট্রাম্প যখন একতরফাভাবে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দুর্বল করছেন, তখন বেইজিং ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে ইচ্ছুক। চীনের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের আক্রমণাত্মক শুল্ক আরোপ সত্ত্বেও, অনেক চীনা ডিপ্লোম্যাটগণ আন্তর্জাতিক উদ্বেগকে তেমন গুরুত্ব দেননি যে বাণিজ্য যুদ্ধ সামরিক সংঘাতের ঝুঁকি বাড়ায়। তাদের চোখে, বর্ধিত বাণিজ্য উত্তেজনা ট্রাম্পের নিজস্ব দর কষাকষির কৌশলের প্রথম ধাপ: প্রথমে কঠোর চাপ দাও, তারপর পিছু হটো এবং একটি চুক্তি করো। মনে হচ্ছে, চীন ট্রাম্পের ট্রেডমার্ক কৌশল তার নিজস্ব পথে চলতে দিতে সন্তুষ্ট এই প্রত্যাশায় যে যুক্তরাষ্ট্র যখন গুরুতর অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিণতির মুখোমুখি হবে তখন তা ব্যর্থ হবে।

তাইওয়ান-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্বার্থের বিষয়গুলোতেও বেইজিং নিকট ভবিষ্যতে সামরিক সংঘাত শুরু করার তেমন কোনো আগ্রহ দেখায়নি। আন্তর্জাতিক বিরোধে ট্রাম্পের "কার্ড ধরে রাখার" প্রতি মনোযোগ কেবল বেইজিংয়ের এই বিশ্বাসকেই জোরদার করে যে, কঠোর শক্তিই শেষ কথা। এবং বেইজিং বিশ্বাস করে যে তারা সুবিধা আদায়ের অবস্থানে রয়েছে।


চীন ও রাশিয়ার সাথে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আলোচনার বিষয়ে ট্রাম্পের আগ্রহের কথা বলা সত্ত্বেও, বেইজিংয়ের কর্মকর্তারা হোয়াইট হাউসের অস্থির, অসংলগ্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণকে কোনো সম্ভাব্য বড় চুক্তির পথে বাধা হিসেবে দেখেন। তারা সহযোগী নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনুসরণে কম আগ্রহী এবং চীনের নিজস্ব সামরিক সক্ষমতা উন্নয়নের ওপর অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক কর্তৃত্ব দ্রুত হ্রাস পাওয়ায়, চীনকে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আলোচনায় যোগ দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক চাপও কমবে। অধিকন্তু, বেইজিং মনে করে যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা শিল্পের ভিত্তি দুর্বল হচ্ছে যা ক্রমবর্ধমান বিশৃঙ্খল শাসন ব্যবস্থার দ্বারা ব্যাহত। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি এবং "গোল্ডেন ডোম" ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির প্রস্তাব সহ ট্রাম্পের ভঙ্গি, বেইজিংকে আর আগের মতো বিচলিত করে না।


<img src ='https://cms.thepapyrusbd.com/public/storage/inside-article-image/6pwjsdsua.crdownload'>


চীনের সামরিক শক্তির উত্থান এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্থবিরতার মূল্যায়ন বেইজিংকে তাঁর আশা পাশের অঞ্চলের ছোট দেশগুলোর আচরণকে আরও দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত করতে উৎসাহিত করেছে। ওয়াশিংটনের সক্ষমতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে, চীন খোলামেলাভাবে অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো মার্কিন মিত্রদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করছে এবং তার মূল স্বার্থের চারপাশে আরও দৃঢ় লাল রেখা টানছে। ফেব্রুয়ারি মাসে অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের কাছে সামরিক মহড়ায় দৃশ্যমান তার আপাতবিরোধী অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রসার এবং সামরিক শক্তি প্রদর্শন, চীনের দৃষ্টিতে, সেই মহান শক্তির বৈশিষ্ট্য যা তারা বিশ্বাস করে যে তারা হয়ে উঠেছে।


তাইওয়ান প্রণালীর জন্য খেলা


সেই স্বার্থগুলোর মধ্যে প্রধান হলো তাইওয়ান। ২০২৪ সালে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে প্রণালীর উভয় পাশে রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা বাড়ালেও, ফেব্রুয়ারিতে চীনের তাইওয়ান ওয়ার্ক কনফারেন্স এবং মার্চ মাসে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির "দুই অধিবেশন" বেইজিংয়ের স্বল্পমেয়াদী তাইওয়ান কৌশলে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এটি নিকট ভবিষ্যতে হামলার হুমকির কোনো উল্লেখযোগ্য প্রমান নির্দেশ করে না।


যদিও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাম্প্রতিক বৈঠকগুলোতে তাইওয়ান দ্বীপের বিরুদ্ধে চীনা সামরিক পদক্ষেপ আসন্ন বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি তবুও সংঘাতের ঝুঁকি বাড়ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বেইজিংয়ের কৌশল প্রাথমিকভাবে তাইওয়ানের স্বাধীনতা প্রতিরোধের পরিবর্তে সক্রিয়ভাবে একত্রীকরণের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে সবার ধারনা। বিশেষ করে শি জিং পিং এর সাম্প্রতিক সামরিক বাহিনীর ভাষণ , যার চূড়ান্ত পরিণতি হলো সিসিপির ২০২১ সালের পরিকল্পনা, "নতুন যুগে তাইওয়ান প্রশ্ন সমাধানের সামগ্রিক কৌশল"। বিবরণ সীমিত, তবে নতুন পদ্ধতি তাইওয়ানের সমাজের অভ্যন্তরে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি, তাইওয়ানীদের একত্রীকরণকে তাদের সবচেয়ে কম বিকল্প হিসেবে দেখার দিকে প্ররোচিত করার উপর জোর দেয় বলে মনে হয়। তাইওয়ানের কর্তৃপক্ষের মতে, বেইজিং তাইওয়ানের নাগরিক সমাজের সংগঠন, রাজনৈতিক দল এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে তাইপের ভাষ্যকে দুর্বল করার জন্য সহযোগিতা করছে, তাইওয়ানের নাগরিকদের চীনা আইডি কার্ড বিতরণ করছে এবং এমনকি তাইওয়ানের সামরিক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আনুগত্যের অঙ্গীকারও আদায় করছে। চীন এই ধরনের পদক্ষেপকে বৈধ হিসেবে দেখতে পারে, যেখানে তাইওয়ানের পাল্টা ব্যবস্থা, যেমন এই ধরনের অনুপ্রবেশ মোকাবিলার জন্য লাইয়ের ১৭-দফা পরিকল্পনা, বেইজিংয়ের কাছে স্বাধীনতা-পন্থী ঔদ্ধত্যের কাজ বলে মনে হয়, যার কারণে চীনকে তার আকাশ ও সমুদ্রসীমা লঙ্ঘন তীব্র করতে এবং বৃহত্তর সামরিক মহড়া পরিচালনা করতে হয়েছে। বেইজিং মূলত লাইয়ের প্রশাসনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ২০২৮ সালে তাইওয়ানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোনো চীনপন্থী নেতার জয়ের সামান্যই আশা থাকে, যা তাইপের সাথে উত্তেজনা বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ায়।


ট্রাম্পের স্পষ্ট বৈদেশিক নীতি অগ্রাধিকারের অভাব এই ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে তোলে। একটি বৃহৎ শক্তির সাথে সংঘাতে জড়ানোর অনিচ্ছা, অন্যান্য গণতন্ত্র রক্ষায় আগ্রহের অভাব এবং তাইওয়ানের প্রতি তার দুর্বল প্রতিশ্রুতি চীনা কর্মকর্তাদের কাছে বড় উদ্বেগের কারণ। বেইজিংয়ের অনেকে সন্দেহ করে যে যদি কোনো মার্কিন রাষ্ট্রপতি নীরবে চীনের তাইওয়ান দখলের ঘটনাকে সহ্য করতে পারেন, তবে তিনি হবেন ট্রাম্প। প্রণালীতে চীনের এপ্রিলের শুরুতে সামরিক মহড়া তার সংকল্পের একটি পরীক্ষা হিসেবে কাজ করেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এর প্রতিক্রিয়ায় মৌখিক নিন্দা বেইজিংকে প্রভাবিত করেনি, চীনা বিশ্লেষকরা মার্কিন প্রতিক্রিয়ার তুলনামূলকভাবে নীরব প্রকৃতি তুলে ধরেছেন।


অন্যান্য প্রতিরোধকারী শক্তিও দ্রুত দুর্বল হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র যখন মিত্র ও প্রতিপক্ষ উভয়ের উপর নগ্ন জবরদস্তি চালাচ্ছে, তখন এই অঞ্চলের এবং এর বাইরের ছোট রাষ্ট্রগুলো নতুন দ্বিধাদ্বন্দ্বের সম্মুখীন হচ্ছে। চীনের বিরোধিতা করা মানে তাদের প্রয়োজন কম, বিশেষ করে যখন চীন নিজেকে তুলনামূলকভাবে আরও অনুমানযোগ্য এবং কম শান্তিবিঘ্নকারী বিশ্ব শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে, যা অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রবৃদ্ধিতে ধারাবাহিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা ব্লক ভেঙে যাওয়ায়, তাইওয়ানে চীনের উপর সংযমের জন্য আন্তর্জাতিক ইচ্ছা ও ক্ষমতা আরও বহু মেরু বিশ্বে হ্রাস পেতে পারে।


<img src ='https://cms.thepapyrusbd.com/public/storage/inside-article-image/5rhzz0mk3.png'>


দর্শক দখল?


এশিয়াতে বেইজিংয়ের আগ্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে, ট্রাম্প প্রশাসন চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক প্রতিরোধ জোরদার করছে। তবে অভ্যন্তরীণ ফাটল এই প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। প্রেসিডেন্টের এজেন্ডা বাস্তবায়নে আগ্রহী প্রশাসন অনুগতদের দ্বারা চালিত পেন্টাগন এবং বৃহত্তর আমলাতন্ত্রে অস্থির, বিঘ্নিত সংস্কার, বেইজিংকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতা জোরদার করার ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেছে। প্রতিরক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মার্কিন কৌশলের জন্য তাইওয়ানের গুরুত্বের বিষয়ে পুরোপুরি একমত নন। উদাহরণস্বরূপ, পেন্টাগনের প্রধান নীতি নির্ধারকের একজন এলব্রিজ কোলবি বলেছেন যে "আমেরিকানরা এটি ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে" এবং এর পরিবর্তে চীনের বৃহত্তর আঞ্চলিক আধিপত্য প্রতিহত করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তাইওয়ানের প্রতি ট্রাম্পের নিজস্ব অস্থির প্রতিশ্রুতি আরও সামরিক প্রস্তুতিকে ফাঁপা করে তোলার ঝুঁকি তৈরি করে। তার "আমেরিকা ফার্স্ট" পররাষ্ট্রনীতির প্রতি অপর্যাপ্তভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক বরখাস্ত প্রশাসন জুড়ে সমমনা সহকর্মীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করেছে।


এদিকে, বাণিজ্য যুদ্ধ দ্বারা সৃষ্ট উত্তেজনা বৃদ্ধি চীনের মধ্যে জাতীয় সংহতিকে শক্তিশালী করেছে। এমনকি দেশের সবচেয়ে উদারপন্থী কৌশলবিদরাও, যারা আগে মার্কিন নীতির কম সমালোচক ছিলেন, এখন ওয়াশিংটনকে আগ্রাসী বলে অভিহিত করছেন এবং মার্কিন অর্থনৈতিক ও পররাষ্ট্রনীতির চাপের মোকাবিলায় কঠোর পদক্ষেপের পক্ষে কথা বলছেন। অনেকের কাছে, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং "এক শতাব্দীতে দেখা যায়নি এমন মহান নেতা" এর পূর্বাভাস বলে মনে করছে। এই ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ ঐকমত্য, তবে, বেইজিংকে তার নিজস্ব কৌশলগত পরিকল্পনার নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়ন করার জন্য প্রয়োজনীয় সমালোচনামূলক আত্ম-প্রতিফলনে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা কম করে তোলে—এবং তার সামরিক ব্যয়ের খাতকে বেশী করতে অনুপ্রেরণা যোগাই।


একইভাবে, ট্রাম্প আনুগত্যের দাবি এবং সরকার জুড়ে সম্মতি ও সামঞ্জস্য জোরদার করার জন্য নির্বাহী ক্ষমতার বিস্তৃত ব্যবহার প্রশাসনের আত্ম-মূল্যায়ন করার ক্ষমতাকে ক্ষুণ্ন করেছে এবং প্রশাসনের মধ্যে ভিন্নমত পোষণকারী কণ্ঠস্বর ছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কার্যকর সামরিক প্রতিরোধ পরিকল্পনাগুলো দায়িত্বের সাথে পরিচালনা করতে পারে না।


শেষ পর্যন্ত, এই অভ্যন্তরীণ গতিশীলতা—দীর্ঘস্থায়ী বাণিজ্য এবং পররাষ্ট্রনীতির বিরোধের চেয়েও বেশি—কৌশলগত অচলাবস্থাকে তীব্র সংকটে পরিণত করার সবচেয়ে বড় হুমকি তৈরি করে। বিপর্যয়কর সংঘাতের ঝুঁকি কমাতে, বেইজিং এবং ওয়াশিংটনের ডিপ্লোম্যাটদের অচলাবস্থা ধরে রাখতে পারার আগে নিজেদের দিকে তাকানো উচিত এবং তাদের নিজস্ব নেতৃত্বের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা উচিত।


লেখক
Gazi Zahid Hassan A Marine Engineer with a deep passion for philosophy and history, Mr. Zahid combines technical expertise with a profound interest in the timeless questions of existence, ethics, and the evolution of human societies. Their unique perspective draws connections between engineering principles and philosophical thought, with a particular focus on how historical events shape modern technological advancements. Dedicated to both intellectual exploration and practical innovation, Mr. Zahid is committed to continuous learning and bridging the gap between science and philosophy. Dhaka, Bangladesh

Comments