History - Greek

গ্রীক দর্শনের উৎসঃ মানুষের চিন্তায় যুক্তির উৎপত্তি- ৩

এথেন্স গ্রীক সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল এবং এটি গ্রীক রাজনীতির পাশাপাশি সংস্কৃতির উত্থানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। পার্সিয়ানদের বিরুদ্ধে মারাথন যুদ্ধ (490 খ্রিস্টপূর্ব) এবং পরবর্তীতে সলামিস এবং প্লাটিয়া যুদ্ধের মাধ্যমে গ্রীকরা পার্সিয়ান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করে। এরই ফলশ্রুতিতে এথেন্স শহরটিকে ঘিরে তার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। এথেন্সের নেতৃত্ব বিশেষ করে পারাক্লিসের সময়ে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অতুলনীয় ছিল এবং তা পরবর্তী কয়েক শতক ধরে গ্রীক সংস্কৃতির এক বিশেষ দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

লেখক Gazi Zahid Hassan
সময় ১২/০৪/২৫ ১৫:৩০:০৭
Facebook LinkedIn X (Twitter) WhatsApp Share
সারাংশ

এথেন্স গ্রীক সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল এবং এটি গ্রীক রাজনীতির পাশাপাশি সংস্কৃতির উত্থানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। পার্সিয়ানদের বিরুদ্ধে মারাথন যুদ্ধ (490 খ্রিস্টপূর্ব) এবং পরবর্তীতে সলামিস এবং প্লাটিয়া যুদ্ধের মাধ্যমে গ্রীকরা পার্সিয়ান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করে। এরই ফলশ্রুতিতে এথেন্স শহরটিকে ঘিরে তার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। এথেন্সের নেতৃত্ব বিশেষ করে পারাক্লিসের সময়ে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অতুলনীয় ছিল এবং তা পরবর্তী কয়েক শতক ধরে গ্রীক সংস্কৃতির এক বিশেষ দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

এথেন্স এবং সংস্কৃতির সম্পর্ক


এথেন্স গ্রীক সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল এবং এটি গ্রীক রাজনীতির পাশাপাশি সংস্কৃতির উত্থানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। পার্সিয়ানদের বিরুদ্ধে মারাথন যুদ্ধ (490 খ্রিস্টপূর্ব) এবং পরবর্তীতে সলামিস এবং প্লাটিয়া যুদ্ধের মাধ্যমে গ্রীকরা পার্সিয়ান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করে। এরই ফলশ্রুতিতে এথেন্স শহরটিকে ঘিরে তার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। এথেন্সের নেতৃত্ব বিশেষ করে পারাক্লিসের সময়ে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অতুলনীয় ছিল এবং তা পরবর্তী কয়েক শতক ধরে গ্রীক সংস্কৃতির এক বিশেষ দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিল।


এথেন্সের গণতান্ত্রিক শাসন, যেখানে নাগরিকদের অধিকাংশকে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হত, তাদের চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছিল। এটি একটি নতুন সময়ের সূচনা করেছিল, যেখানে পুরনো তন্ত্রের বিরুদ্ধে সৃজনশীলতা এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে। বিশেষভাবে থিয়েটার, শিল্প, এবং দর্শনের ক্ষেত্রে গ্রীক সমাজে বিপ্লব ঘটে। একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক আন্দোলন, যা "সোনালী সময়" নামে পরিচিত এবং সারা বিশ্বে এটি এথেন্সকে একটি সাংস্কৃতিক মহাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এই সময়ে নাটক, শিল্প, স্থাপত্য, এবং দার্শনিক চিন্তা-ভাবনা সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছায়।


গ্রীক সাহিত্য এবং শিল্পের অন্যতম মূল ভিত্তি ছিল নাট্যকার আস্কাইলাস, সোফোক্লিস, এবং ইউরিপিডিসের কাজ। তারা ট্র্যাজেডি, কৌতুক এবং নাট্যশিল্পের গভীর দৃষ্টিকোণ দিয়ে সমাজের চিত্র অঙ্কন করেছেন। তাঁদের কাজগুলো সারা বিশ্বের মানুষের হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করেছিল এবং এখন পর্যন্ত গ্রীক সভ্যতার অমূল্য রত্ন হিসেবে পরিচিত। এথেন্সের সাংস্কৃতিক উন্নয়নে সক্রেটিস, প্লেটো, এবং অ্যারিস্টটলও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। তাঁদের চিন্তাধারা, যা পরবর্তীতে পশ্চিমী দর্শনের ভিত্তি গড়ে তোলে, মানুষের আত্মা, নৈতিকতা এবং সমাজের প্রতি চিন্তা-ভাবনার ধারক এবং বাহক।

তবে এই সমস্ত অর্জন এবং সাংস্কৃতিক উত্থানের সাথে, এথেন্সের রাজনৈতিক স্থিতি এবং এর সম্প্রসারণও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। পরবর্তীকালে, এথেন্সকে শক্তিশালী রাখতে পারাক্লিসের নেতৃত্বে গৃহীত রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং পরবর্তী ইতিহাসের অস্থিরতা তার সাংস্কৃতিক উত্তরণের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল।


অ্যানাক্সাগোরাস


অ্যানাক্সাগোরাস ছিলেন একজন আইওনিয়ান দার্শনিক, যিনি এথেন্সে যুক্তিবাদী চিন্তাধারা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তাঁর চিন্তাভাবনা গ্রীক দার্শনিক ইতিহাসে এক বিপ্লব ঘটায়। অ্যানাক্সাগোরাস প্রথমবারের মতো বুদ্ধি বা মস্তিষ্ক ধারণার উপর জোর দিয়েছিলেন, যা তিনি বিশ্বাস করতেন যে পৃথিবী এবং মহাবিশ্বের সবকিছু তার ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। তিনি যুক্তি দেন যে বুদ্ধি একমাত্র শক্তি যা বিশ্বে স্থান এবং সময়ের মধ্যে নিয়মিততা এবং সৃষ্টির কাজ করছে।


অ্যানাক্সাগোরাসের মতে, পৃথিবী এবং মহাবিশ্ব একটি মিশ্রণ থেকে তৈরি এবং সমস্ত উপাদান একে অপরের মধ্যে মিশে গেছে। তার ধারণা ছিল যে, পৃথিবী বা অন্য কোন বস্তু তার চারপাশের উপাদানগুলির মাধ্যমে গঠিত এবং এর প্রতিটি উপাদান নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে কাজ করে। এই চিন্তাভাবনা, যা পরবর্তীতে বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, সেই সময়ে সমাজের মধ্যে অনেক বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। ধর্মীয় এবং প্রথাগত ধারণা থেকে তার বিপথগামী চিন্তা তাকে এথেন্স থেকে নির্বাসিত করে। তবে তাঁর চিন্তা পরবর্তী সময়ে অনেক দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিকের চিন্তা-ভাবনাকে প্রভাবিত করেছে, যেমন প্লেটো এবং অ্যারিস্টটল।


<img src ='https://cms.thepapyrusbd.com/public/storage/inside-article-image/eybdev40d.png'>


অ্যাটমিস্টরা


অ্যাটমিস্টরা, যারা লিউকিপ্পাস এবং ডেমোক্রিটাস দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করতেন, একটি যান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রস্তাব করেছিলেন যা আধুনিক পারমাণবিক তত্ত্বের প্রাথমিক ধারণা হিসেবে কাজ করেছিল। তাদের মতে, পৃথিবী এবং মহাবিশ্ব সবকিছু তৈরি হয়েছে ক্ষুদ্র অণু দ্বারা, যেগুলি একে অপরের মধ্যে শূন্যস্থানে চলাচল করে। এই অণুগুলির আকার এবং গঠন বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়, এবং তারা পৃথিবীর সব বস্তু এবং জীবের গঠন ঘটায়।


ডেমোক্রিটাস এবং লিউকিপ্পাস বিশ্বাস করতেন যে, এই অণুগুলি একধরণের শূন্যস্থান বা ''ভয়েড'' এ চলমান থাকে এবং এতে পৃথিবী মহাবিশ্বের প্রতিটি ঘটনা বা পরিবর্তন ঘটে। তারা এই ধারণাকে মৌলিক উপাদানের প্রতি বিশ্বব্যাপী নির্দেশিত একটি নির্দিষ্ট আইন বা নিয়মের মধ্যে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি তখনকার সময়ে খুব বিপ্লবী ছিল এবং আধুনিক বিজ্ঞানেও তা ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।


অ্যাটমিস্টদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল একটি পৃথিবী যা যান্ত্রিক এবং প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং তাদের বিশ্বব্যাপী চিন্তা-ভাবনা এক ধরণের পরিপূর্ণ তত্ত্বমূলক দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা করেছিল। তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে, পৃথিবী এবং মহাবিশ্বের সৃষ্টির জন্য কোনও অলৌকিক শক্তির প্রয়োজন নেই বরং এটি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক অণু এবং শূন্যস্থান বা ভয়ডের মাধ্যমে নির্ধারিত।


প্রোটাগোরাস এবং সোফিস্টরা


প্রোটাগোরাস ছিলেন সোফিস্টদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক যিনি মানব সত্ত্বার আপেক্ষিকতা নিয়ে চিন্তা করেছিলেন। তার মতে, “মানুষই সমস্ত কিছুর পরিমাপক” – অর্থাৎ, মানুষ তার নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে যা কিছু দেখে, তা সত্য। প্রোটাগোরাসের এ ধারণা আপেক্ষিকতা বা রিলেটিভিজমের প্রথম দিকের ধারণা এবং এটি পরবর্তী শতাব্দীজুড়ে বিভিন্ন দার্শনিক চিন্তায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল।


প্রোটাগোরাসের মতে, কোন কিছুই সঠিক বা ভুল, ভাল বা খারাপ, সমস্তই নির্ভরশীল মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির উপর। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, সত্য তার নিজস্ব ভিন্নতা অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় এবং মানুষের অনুভূতি এবং উপলব্ধির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের সত্য তৈরি হয়। এর ফলে, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়েও আপেক্ষিকতার ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল, যা পরবর্তীতে দার্শনিকদের সমাজ ও নৈতিকতা সম্পর্কে চিন্তা করতে প্রেরণা দেয়।


প্রোটাগোরাসের এই চিন্তাভাবনা সেসময় অনেক বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল, এবং তাকে ধর্মদ্রোহী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তবে তার দৃষ্টিভঙ্গি পরবর্তীতে অনেক দার্শনিক, মনোবিজ্ঞানী এবং সমাজবিদের কাজকে প্রভাবিত করেছে। এই আপেক্ষিকতা বা রিলেটিভিজমের ধারণাটি আধুনিক যুগে নৈতিকতা, আইন, এবং মানবিক মুক্তির ক্ষেত্রে নানা গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বের জন্ম দিয়েছে।


সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট এবং ঐতিহ্য


এথেন্সের সাংস্কৃতিক দিকটি শুধু বুদ্ধিজীবী বা দার্শনিক চিন্তার সাথে সীমাবদ্ধ ছিল না, এটি ছিল সমাজের সামগ্রিক সংস্কৃতির একটি অংশ। গ্রীক সভ্যতা এবং এর চিন্তাভাবনা একটি বিপ্লবী পর্যায়ে পৌঁছেছিল, যেখানে মানুষের সমাজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রাকৃতিক ঘটনাবলীর ব্যাখ্যা সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হচ্ছিল। ধর্ম এবং পৌরাণিক ব্যাখ্যা থেকে বেরিয়ে, দার্শনিকরা আরও যুক্তিবাদী ও বৈজ্ঞানিক চিন্তা শুরু করেছিলেন।


এথেন্সে প্রতিটি দার্শনিক, শিল্পী, এবং রাজনৈতিক নেতা তাদের চিন্তাভাবনার মাধ্যমে গ্রীক সভ্যতাকে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছিল। দর্শনের পাশাপাশি গ্রীক নাটক এবং থিয়েটার সমাজের নৈতিকতা এবং ধর্মীয় বিশ্বাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সহায়ক ছিল। নাট্যকাররা তাদের কাজে সমাজের দুর্বলতা, অসংগতি, এবং মানবিক সমস্যাগুলির প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে তারা মানুষের আচরণ এবং পৃথিবীকে এক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করেছিলেন।

এথেন্সের সময়কাল, অ্যানাক্সাগোরাস, অ্যাটমিস্টরা, এবং প্রোটাগোরাসের চিন্তাধারা পশ্চিমী দার্শনিক চিন্তার একটি মৌলিক অধ্যায় রচনা করেছে। এই সময়ের দার্শনিক চিন্তা শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক যুগ নয়, বরং এটি ছিল এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা, যা পরবর্তী যুগের সকল দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করেছে। আজও তাদের চিন্তাধারা আমাদের জন্য একটি মূল্যবান শিক্ষা এবং চিন্তা করার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

এথেন্সের দর্শন এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, যা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। পরবর্তীতে আমাদের সৃজনশীলতা, যুক্তিবাদ এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রতি এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে। এর প্রভাব আজও অনুভূত হয় এবং ভবিষ্যতের জন্য এটি একটি দিকনির্দেশক শক্তি হয়ে থাকবে।


লেখক
Gazi Zahid Hassan A Marine Engineer with a deep passion for philosophy and history, Mr. Zahid combines technical expertise with a profound interest in the timeless questions of existence, ethics, and the evolution of human societies. Their unique perspective draws connections between engineering principles and philosophical thought, with a particular focus on how historical events shape modern technological advancements. Dedicated to both intellectual exploration and practical innovation, Mr. Zahid is committed to continuous learning and bridging the gap between science and philosophy. Dhaka, Bangladesh